বুদ্ধিমতী মা ......
হযরত উম্মে সুলাইম রা. ছিলেন মালেকের স্ত্রী। জাহেলী যুগে তার ঘরেই হযরত
আনাস রা. জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। ইসলাম
গ্রহণের কারণে স্বামী মালেক ক্ষুব্ধ হয়ে শামে চলে যান এবং সেখানে
মৃত্যুবরণ করেন।
অতঃপর আবু তালহা তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তিনি
বললেন, হে আবু তালহা! আমি তোমার প্রস্তাবে সম্মত আছি। কোন বুদ্ধিমতী মহিলা
তোমাকে প্রত্যাখ্যাণ করতে পারে না। তবে কথা হচ্ছে, আমি একজন মুসলিম নারী, আর তুমি এখনো ইসলাম গ্রহণ করোনি।
হে আবু তালহা! তুমি কি জান না যে, তোমার প্রতিপালক আল্লাহই এ যমিন হতে উদ্ভিদ উৎপন্ন করেন?
আবু তালহা বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই। হে আবু তালহা! তাহলে তুমি কিভাবে গাছের
পুজা করো? সেটাতো একটা মাখলুক মাত্র। হে আবু তালহা! তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ
করো, তাহলে আমি তোমার কাছে বিবাহের কোন মহর দাবী করবো না। এরপর একদিন আবু
তালহা কালেমা পাঠ করত: ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত হলেন অতঃপর তাদের মাঝে বিবাহ
সম্পন্ন করা হয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের একটি ছেলে দান করেন। ছেলেটি ছিলো
তাদের খুবই আদরের। হঠাৎ ছেলেটি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লো। আবু তালহা রাতে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবার হতে ফিরলেন। সাথে
সাথি-সঙ্গী অনেকেই। প্রথমেই অসুস্থ ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলেন, উম্মে সুলাইম
বললেন, ছেলেটি অনেক দিন যাবৎ অসুস্থ। আজ সে ভাল আছে।
উম্মে সুলাইম
সবাইকে খাবার পরিবেশন করলেন। খাবার শেষে সবাই চলে গেল। আবু তলহা ঘুমের
প্রস্তুতি নিলেন। উম্মে সুলাইম নিজ হাতে স্বামীকে সুগন্ধি মেখে দিলেন।
প্রতি রাতের ন্যায় খোশ-গল্প করলেন। অতঃপর ঘুমালেন। শেষরাতে উম্মে সুলাইম
বললেন, হে আবু তালহা! যদি কেহ কাউকে কোন বস্তু ধার দেয় অতঃপর মালিক তা
ফেরত চায়, তাহলে কি ধার গ্রহীতা ঐ বস্তু ফেরত না দিয়ে পারে? আবু তালহা
বললেন, না, তা তো হতে পারে না।
তখন উম্মে সুলাইম বললেন, আল্লাহ
তায়ালা তোমাকে একটি ছেলে ধার দিয়েছিলেন। এখন তিনি তাকে তাঁর নিকট তুলে
নিয়ে গেছেন। অতএব তুমি সওয়াব মনে করে ধৈর্য ধারণ করো। আবু তালহা
ইন্নাল্লিাহি ... পাঠ করলেন এবং আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন।
ভোরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে ফজরের নামায আদায়
করলেন। নামায শেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উক্ত ঘটনা
জানালেন। ঘটনা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য
দোয়া করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দোয়া কি বিফলে
যায়? কয়েক মাস পর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আরো একটি ফুটফুটে বাচ্চা দান
করলেন।
বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, উম্মে সুলাইম রা.-এর নজিরবিহীন
ধৈর্যের প্রতিফল হিসেবে আল্লাহতায়ালা তাকে এমন দশজন ছেলে সন্তান দান করেন
যারা সকলেই কুরআনের হাফেয এবং ধারক-বাহক ছিলেন।
{আল ইছাবা : ৭/৩২৯, উসদুল গাবাহ : ৭/৩৭৬, খুলুকুল মুমিন : ৬৮}