Thursday 23 July 2015

রাসুল (সাঃ) মাটির তৈরি নাকি নূরের তৈরি : গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানতেন : দুনিয়ার জীবনের মতো জীবিত/হায়াতুন্নবি?




রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে ভুল ধারনা কাটিয়ে সঠিক আকিদা গ্রহণ করুণ- 

১- রাসুল (সাঃ) মাটির তৈরি নাকি নূরের তৈরি? 
এ প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আল্লাহ তা’লা দিয়েছেন, আল্লাহ তা’লা বলেন-
হে রাসুল আপনি বলে দিন যে, নিশ্চয় আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। (কাহাফ-আয়াত ১১০)
তিনি আমাদের মতোই পিতা-মাতার মাধ্যমে জন্মগ্রহন করা ১ জন মানুষ কিন্তু আলাহ তা’লা তার কাছে আল-কুরআন অহি করে সমস্ত সৃষ্টিজগতের সব সৃষ্টি থেকে তাকে বেশী মর্যাদা দান করেছেন।সুতরাং তিনি আমাদের মতোই মানুষ কিন্তু শরিয়ত কিছু জায়গায় ভিন্ন বলেছেন যেমন রাসুল (সাঃ)-এর কাছে অহি আসতো,আমাদের কাছে অহি আসে না, তার ক্ষেত্রে ৪এর অধিক বিবাহ বৈধ ছিল,আমাদের জন্য নয়, তার জন্য যাকাতের মাল গ্রহণ করা হারাম ছিল...। সুতরাং শরিয়ত যে ক্ষেত্রে আলাদা বলেছে শুধু সেটা বাদে অন্য সব জায়গার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’লার এ বিধান যে, তিনি আমাদের মতোই মানুষ, শরীয়তের কোথাও বলা হয়নি যে, তিনি নূরের তৈরি আর তাছাড়া তায়েফে যখন রাসুল (সাঃ) কে পাথর মেরে রক্তাক্ত করা হল- তিনি নূরের তৈরি হলে তখন তো রক্ত না বের হয়ে নূর বের হওয়ার কথা ছিল। সুতরাং না জেনে শরিয়তের বিষয়ে কথা বলাতে সাবধান হন। 

২- রাসুল (সাঃ) কি গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানতেন?
উত্তরঃ একমাত্র আল্লাহ তা’লা ছাড়া কেও গায়েবের খবর জানে না। আল্লাহ তা’লা বলেন, হে রাসুল (সাঃ) আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভাণ্ডার রয়েছে তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। (আনআম-৫০)
রাসুল (সাঃ) গায়েব জানতেন না শুধুমাত্র অহির মাধ্যমে তাকে যা জানানো হতো তিনি তাই জানতেন। তায়েফের মানুষ রাসুল (সাঃ)-এর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তাকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করেছিলেন- যদি রাসুল (সাঃ) আগে থেকেই জানতেন যে- তায়েফের মানুষ দাওয়াত তো প্রত্যাখ্যান করবেই সাথে পাথর মেরে আমাকে রক্তাক্ত করবে তাহলে কি তিনি তায়েফে যেতেন? অহুদের ময়দানে মুসলিমদের কি করুণ পরিণতি হয়েছিল শুধুমাত্র রাসুল (সাঃ)-এর ১টা আদেশ অমান্য করার কারণে, তিনি যদি আগে থেকেই জানতেন তাহলে কি এতো মুসলিম শহীদ হতো? রাসুল (সাঃ)-এর দাত ভাঙ্গতো? যারা আল্লাহ তা’লার কুরআন বিরোধী আকিদা রাখেন তাদের কাছে প্রশ্নগুলো রইলো, দয়া করে একটু চিন্তা করে দেখুন। 

৩- রাসুল (সাঃ) কি দুনিয়ার জীবনের মতো জীবিত/হায়াতুন্নবি? 
উত্তরঃ রাসুল (সাঃ) দুনিয়ার জীবন থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন- আল্লাহ তা’লা রাসুল (সাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন- নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে। (জুমার-আয়াত ৩০)
দুনিয়ার জীবনে প্রত্যেককেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। রাসুল (সাঃ) দুনিয়ার জীবন থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ব্যপারে সঠিক বিধান হচ্ছে তিনি মারা গেছেন কিন্তু কবরে জীবিত রয়েছেন আর সেটা পরকালিন জীবন, সেই জীবনের সাথে দুনিয়ার জীবনের কোন সম্পর্ক নেই এবং পরকালিন জীবনে আল্লাহ তা’লা খারাপ মানুষকে শাস্তিতে রেখেছেন এবং নবি-রাসুল সহ সমস্ত ভালো মানুষকে শান্তিতে-আরাম আয়েসে রেখেছেন, সুতরাং সেই জীবনের সাথে মিলিয়ে কেও যদি বলে যে- রাসুল (সাঃ) দুনিয়ার জীবনের মতো জীবিত/হায়াতুন্নবি তাহলে তো বলতে হয়, এ পর্যন্ত যারা মারা গেছে সবাই দুনিয়ার জীবনের মতো জীবিত কেননা তারাও তো রাসুল (সাঃ)-এর মতো কবরে জীবিত রয়েছে কেননা তাদের তো জীবিত করেই কবরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং এ ব্যপারে সঠিক বিধান হচ্ছে তিনি মারা গেছেন কিন্তু কবরে জীবিত রয়েছেন আর সেটা পরকালিন জীবন, সেই জীবনের সাথে দুনিয়ার জীবনের কোন সম্পর্ক নেই।
Like · Comment · Share
  • Rafia BegumJobrul Miah and 15 others like this.
  • Sabbir Choudhury মা'শা আল্লাহ; সুন্দর আলোচনা করেছেন ৷ বিদ'আতীরা এই বিষয়গুলোকে নিয়েই সবসময় ধান্দাবাজি করে থাকে ৷৷

Saturday 11 July 2015

সহীহুল বুখারীর নামের পূর্ন অর্থ : আল-জামি’ আল মুসনাদ আস সহীহ আল মুখতাসার মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী


সহীহুল বুখারীর নামের পূর্ন অর্থ
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারীর (র) সংকলিত সহীহুল বুখারী হাদীস গ্রন্থের সম্পুর্ণ নাম এবং সেই নামের ব্যাখ্যা আমাদের জনা উচিত। কেননা আমরা যদি তা জানি তাহলে আমরা বুঝবো যে ইমাম বুখারী (র) তার সংকলিত হাদীসের গ্রন্থ দারা কি বুঝাতে চেয়েছেন।
গ্রন্থের পূর্ননাম:
আল-জামি’ আল মুসনাদ আস সহীহ আল মুখতাসার মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী।
আল-জামি’:
হাদীসের প্রধান প্রধান বিষয়সমূহ সম্বলিত বলে একে ‘জামি’য়’ বা পূর্ণাঙ্গ বলা হয়। যে সকল হাদীস গ্রন্থে ১. আকিদা-বিশ্বাস ২. আহকাম ৩. আখলাক ও আদাব ৪. কুরআনের তাফসীর ৫. সীরত ও ইতিহাস ৬. ফিতনা ও আশরাত (বিশৃঙ্খলা ও আলামতে কিয়ামত) ৭. রিকাফ অর্থাৎ আত্বসুদ্ধি ৮. মানাকিব বা ফাজিলাত ইত্যাদি সকল প্রকারের হাদীস বিভিন্ন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয় তাকে আল- জামি’ বলা হয়। ইমাম বুখারী (র) তার আল-জামে’ কে বিভিন্ন পর্ব হিসেবে সাজিয়েছেন যেমন: পর্ব (১): কিতাবুল ওয়াহী বা ওয়াহীর সূচনা, পর্ব (২): কিতাবুল ইমান বা ইমান (বিশ্বাস) ইত্যাদি। ইমাম বুখারী (র) এর আগে কেউ এরখম আল-জামি’ গ্রন্থ সংকলন করেন নাই। এবং ইমাম বুখারী (রা) এর মতো কেউ আল-জামি’ কে সাজাতেও পারেনাই। ইমাম বুখারী (র) তার এই জামে’ শব্দ দারা বুঝাতে চেয়েছেন যে ‍তিনি এমন একটি কিতাব লিখতে চান যাতে ইসলামের সকল বিষয় সংযুক্ত থাকবে।
আল মুসনাদ:
আল মুসনাদ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন যে তিনি এই গ্রন্থের প্রত্যেকটি হাদীসের সুত্র উল্লেখ করবেন যাতে করে যে কেউ সহযে বুঝতে পারে যে হাদীসটি রসুল (সা) থেকে কিভাবে তার পর্যন্ত এসেছে। আল মুসনাদ অর্থ ইসনাদ (সুত্র) সম্বলিত। যেমন: A,B থেকে শুনেছে B,C থেকে শুনেছে C,D থেকে শুনেছে D, রসুল (সা) থেকে শুনেছে। ইমাম বুখারী (র) বলতেছেন যে তিনি পুরো ইসনাদ দিবেন যাতে কোন সন্ধেহ না থাকে এবং যানা যায় হাদীসটি কোথা থেকে কিভাবে এসেছে। (বি:দ্র: হাদীসের গ্রন্থের ক্ষেত্রে মুসনাদ আলাদা বিষয় যেমন: মুসনাদে আহমাদ)
আস-সহীহ:
তিনি বলতেছেন যে তিনি এই গ্রন্থে উচ্চ স্থরের সহীহ হাদীস গুলোকেই শুধু মাত্র সংকলিত করবেন। কেননা হাদীসের মাঝে অনেক স্থর রয়েছে যেমন: ১. সহীহ ২. হাসান ৩. যইফ ৪. যইফ জিদ্দান ৫. মওযু’ । তিনি এই গ্রন্থে শুধু মাত্র সহীহ হাদীস নিয়ে আসবেন সেটা তিনি বলেছেন আস-সহীহ দ্বারা। ইমাম বুখারী (র) প্রথম যিনি সহীহ হাদীসের গ্রন্থ লিখেছেন। তিনি ২ টা জিনিস করেছেন যা তার আগে কেউ করেননি ১. জামে’ গ্রন্থ কেউ সংকলন করেননি ২. শুধু সহীহ হাদীস হাদীস দারা কেউ গ্রন্থ সংকলন করেননি।
আল-মুখতাসার:
মুখাতসার মানে হচ্ছে উপসংহার বা সামারী বা সংক্ষিপ্ত । তিনি জামে’ লিখেছেন আর তার অনুচ্ছেদ লিখে তাকে মুখতাসার করেছেন। আল জামে’ হচ্ছে টপিক্স (topics) আল মুখতাসার এর কনটেন্ট (content)। আল মুখতাসার বলে তিনি আরোও বুঝিয়েছেন যে, তিনি পৃথিবীর সকল সহীহ হাদীস এই গ্রন্থের মধ্যে নিয়ে আসবেন না অর্থাৎ তিনি বলছেন যে তার এই সহীহর বাহীরেও সহীহ হাদীস থাকতে পারে। এবং এটা খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয় যে ইমাম বুখারী (র) কখনই বলেন নাই যে তিনি পৃথিবীর সকল সহীহ হাদীস সংকলন করছেন, তবে তার কিতাবের সকল হাদীস সহীহ তিনি সেটাই বলেছেন। তিনি মুখতাসার করেছেন ফেকার বর্ণনা ধারায়। ইমাম বুখারী (র) একজন উচ্চমানের ফকিহ্ ও ছিলেন। তিনি নিজেই মুজতাহীদ ছিলেন।
মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী:
রসূল (সা) জীবনী সময়ের তার কথা,কাজ,অনুমোদনে এর বর্ণনা । তিনি বলছেন যে এটা শুধু রসুল (সা) কথা নয় এটা রসুল (সা) জীবনে কি ঘটেছিল, তিনি কি করেছিলেন, সে সময়ে কি হয়েছিল তার সকল কিছু সংকলিত করা হয়েছে।
============================================================================
আমরা সংক্ষিপ্ত ভাবে এই গ্রন্থকে ”সহীহুল বুখারী” বলে থাকি কিন্তু তিনি এই গ্রন্থকে ”আল-জামি’ আলমুসনাদ আসসহীহ আলমুখতাসার মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী” নামকরণ করার মাধ্যমে অনেক কিছুই বুঝাতে চেয়েছেন।
ইনশাআল্লাহ এই নামকরন জানার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো যে ইমাম বুখারী তার গ্রন্থকে কিভাবে সাজিয়েছেন মুসলিম উম্মার জন্য এবং সত্যি এই গ্রন্থ আমাদের কাছে এমন যেন আমরা রসুল (সা) বানী গুলো শুনতে পাই গ্রন্থ পড়ার মাধ্যমে। আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা ইমাম বুখারীকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন সাথে আমাদেরকেও তার সহীহ থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন।আমিন।
তথ্যসুত্র:
1. সহীহ আল বুখারী অনুবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
2. সহীহুল বুখারী অনুবাদ তাওহীদ প্রকাশনী।
3. ইমাম বুখারীর (র) জীবনী গ্রন্থ।
4. ড: শায়খ ইয়াসির কাদীর ইমাম বুখারীর জীবনী লেকচার।
সূত্র

Friday 3 July 2015

রাসূল (সাঃ) এর জন্মকালীন এক অলৌকিক ঘটনা


বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) পিতা আব্দুল্লাহ ও মাতা আমিনার মাধ্যমে দুনিয়ার বুকে তশরিফ আনলেন। নূর নবীর জন্মকালীন সময়ে অগনিত অলৌ্কিক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে ।
নবী মাতা আমিনা হয়তে বরণিত আছে , তিনি বলেন, যে সময় আমি আমার পুত্র কে প্রশব করেছিলা তখন একটি জোতিরময় বিরাট আবর ( মেঘমালা ) দেখতে পেলাম । তার ভিতর হতে নিমুক্ত আওয়াজ সুনতে পেলাম । কে যেন বলছে, তাঁকে (মুহাম্মদ সাঃ কে) দানকর-হযরত আদম (আঃ) এর আদরশ চরিত্র, হযরত শীস (আঃ) এর এল্মে মরিফত, হযরত নূহ (আঃ) এর বীরত্ব, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর বন্ধুত্ব, হযরত ইস্মাইল (আঃ) এর ভাসা, হযরত ইসহাক (আঃ) এর সন্তুস্টি, হযরত সালেহ (আঃ) এর নিরভুল বাক্য, হযরত লূত (আঃ) এর বিজ্ঞান, হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর সুসংবাদ, হযরত মুসা (আঃ) কঠুরতা, হযরত আইয়ূব (আঃ) এর ধৈয্য, হযরত ইউনুস (আঃ) এর মান্যতা ও বন্দেগী, হযরত ইউসা (আঃ) এর জিহাদ, হযরত দাউদ (আঃ) এর আওয়াজ, হযরত দানিয়েল (আঃ) এর মহব্বত, হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর পবিত্রতা, হযরত ঈছা (আঃ) এর সাধুতা এবং সকল আম্বিয়া (আঃ) এর চরিত্র সাগরে তাকেঁ ডুবিয়ে দাও ।
অরথাত সকল নবীর চরিত্র গুনে গুনান্নিত কর । -(মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়া ১ম খন্ড পৃঃ–২২)